পৃথিবীর ভূস্বর্গ। জম্মু ও কাশ্মীর।
কাশ্মীর আসলে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিমের একটি পাহাড়ী অঞ্চল। উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত, কাশ্মীর শব্দটি ভৌগোলিকভাবে শুধু বিশাল হিমালয় এবং পীর পঞ্জল পর্বতমালার উপত্যকাকে নির্দেশনা করতো।
আর এখন কাশ্মীর বলতে বোঝায় একটি বিশাল অঞ্চল যা ভারতীয়-শাসিত রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর (এর মধ্যে বিভাগ সমূহ রয়েছে: কাশ্মীর উপত্যকা, জম্মু এবং লাদাখ), পাকিস্তানি-শাসিত গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ কাশ্মীর প্রদেশ এবং চীন-শাসিত আকসাই চীন এবং ট্রান্স-কারাকোরাম ট্রাক্ট অঞ্চলসমূহ।
একসময় কাশ্মীর এলাকা হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল থাকলেও পরে সেটি বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এরপরে অমরনাথকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরে শৈবধর্মের উত্থান হয়।
------------------------ 1349-------1820 -------------------------
১৩৪৯ সালে শাহ মীর কাশ্মীরের প্রথম মুসলমান শাসক হিসাবে শাসন করেন। তার আমলেই সেখানে সালাতিনই কাশ্মীর বা স্বাতি রাজবংশের সূচনা হয়। তারা ছিল প্রায় পাঁচশ বছর। তারপরে ১৫২৬ থেকে ১৭৭১ সাল অবধি থাকে মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে। এরপরে আফগান দুররানি সাম্রাজ্যের অধীনে থাকে ১৭৪৭ থেকে ১৮২০ সাল অবধি।
------------------------ 1820 ------- 1947 -------------------------
১৮২০ সালে রণজিত সিংহের নেতৃত্বে শিখরা কাশ্মীর অধিকার করে। উনিশ সতকের মাঝামাঝি সময় যখন ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ চলছিল,
তখন জম্মু অঞ্চলের ডোগরা শাসক গুলাব সিং নানাভাবে ইংরেজ দের সাহায্য করেছিলেন। তার আমলে ডোগরা রাজপুত বংশের গোলাব সিং তাঁর কমান্ডার নিযুক্ত হন।
এই সাহায্যের পুরুস্কার হিসাবে বৃটিশ শাসকরা 'অমৃতসর চুক্তি’র ভিতর দিয়ে ১৮৪৬ সালে কাশ্মীর উপত্যকা ও তার পাশ্ববর্তী অঞ্চলের উপর গুলাব সিং-এর অধিকার মেনে নেয় এবং তাকে করদ রাজ্যের শাসকের স্বীকৃতি দেয়। চুক্তিতে বলা হয় কাশ্মীর 'চিরকালের জন্য' হিন্দু ডোগরা শাসকদের অধীনে থাকবে এবং ডোগরা শাসকরা বংশাক্রমে কাশ্মীর শাসন করবে। কৃতজ্ঞ গুলাব সিং কোম্পানিকে 75 লক্ষ টাকা দিয়েছিল। ১৯২৫ সালে হরি সিং হন কাশ্মীরের রাজা।
তার রাজত্বকালেই ১৯০৫ সালে জন্ম শেখ আবদুল্লার । 1930 -এর দশকের প্রথম দিকে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। শেখ আবদুল্লা নামে এক শিক্ষিত কাশ্মীরী যুবক ও তার অনুগামীরা প্রচার শুরু করে যে কাশ্মীরে এক বিদেশি শাসন বলবৎ রাখা হয়েছে। ডোগরা শাসকরা কাশ্মীরী নন। ব্রিটিশ শাসকদের দাক্ষিণ্যে ডোগরা শাসকরা কাশ্মীর শাসন করছে। তিনি ১৯৩০ সালের দিকে শ্রীনগর সরকারী হাইস্কুলে জুনিয়ার শিক্ষকের চাকরী পান। কিছু কাশ্মীরী যুবকদের নিয়ে শুরু হয় আন্দোলন। ১৯৪২ সালে একটিরিডিং রুম স্থাপন করেন শ্রীনগরে । সেখানে আলোচনা হত কাশ্মিরী মুসলমানদের দুঃখ দুর্দশা কিভাবে দূর করা যায়, লেখাপড়া কিভাবে শেখানো যায় । একই সময়ে গোলাম আব্বাস জম্মুর মুসলমানদের নিয়ে ‘ইয়ংমেনস্ মুসলিম এয়াসোসিয়েশন’ তৈরী করেন। অন্যদিকে পাঞ্জাবে ওলাহোরে কাশ্মিরী ও পাঞ্জাবী মুসলমানদের নিয়ে গঠিত ‘অল ইন্ডিয়া কাশ্মীর মুসলিম কনফারেন্স’ কাশ্মীরের রাজনীতি নিয়ে চর্চা করতে থাকে । এদিকে মহম্মদ ইক্বাল দাবী তোলেন ’মুসলমানরা স্বতন্ত্র’ ।
------------------------ 1947 ------- 2013 -------------------------
এদিকে তখন ব্রিটিশ রাজত্বে দুটো ভাগ ছিল। একটা বৃটিশ ইন্ডিয়া, আর একটা করদ রাজ্য । করদ রাজ্যের সংখ্যা ছিল ৫৬৫ টি । কিছু রাজ্য খুব বড় ছিল, যেমন মাইসোর, কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ ইত্যাদি। বাকীগুলো অধিকাংশই ছিল ছোটছোট । রাজতন্ত্রে প্রজার কোন ক্ষমতা ছিল না। ফলে রাজাকে ক্ষমতাচ্যূত করার দাবী উঠতে থাকে সব জায়গায়। ‘ অল ইন্ডিয়া স্টেটস পিপল্স কনফারেন্স’ গঠন হয় সব রাজ্যের মানুষকে নিয়ে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় সিদ্ধান্ত ছিল, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন রাষ্ট্র হবে পাকিস্তান এবং অবশিষ্ট অঞ্চলগুলো স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হবে । তবে যেসব অঞ্চল সরাসরি ব্রিটিশ শাসিত ছিল না কিন্তু ব্রিটিশ রাজের আনুগত্য স্বীকার করত এরূপ দেশীয় রাজ্যগুলোকে নিজেদের ইচ্ছামাফিক ভারত বা পাকিস্তানে যোগদান অথবা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কাশ্মীর ছিল এরূপ একটি দেশীয় রাজ্য।
ভারত বা পাকিস্তান এর কোনোটিতেই যোগদান না করে রাজা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। এটি ভারত মেনে নিলেও পাকিস্তান মেনেনি ।
দেশের প্রায় সব রাজারা ১৫ ই আগষ্টের মধ্যে নেহেরুর ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতে যুক্ত হলেও কাশ্মীর, জুনাগড় এবং হায়দ্রাবাদ তাতে সায় দিল না।
রাজা হরি সিং তাদের কাছ থেকে একটা ডেপুটেশন নিয়ে শোনে এরা কি বলতে চায়। তখন আবদুল কাদির নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিচারের সময় জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । রাজার রক্ষীরা গুলি ছোড়ে । তাতে ২১ জন মারা যায় । শুরু হয়ে যায় কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলন। শেখ আবদুল্লা বললেন, ’এইভাবে আবেদন নিবেদন করে চলবে না, রাজনৈতিক দল করতে হবে ।’ তিনি প্রেমনাথ বাজাজ, গিরিধারীলাল ডোগরার মত হিন্দুদেরকেও নিয়েছিলেন সেই দল গঠনে। তৈরী হয় ’অল জম্মু এন্ড কাশ্মীর মুসলিম কনফারেন্স’।
কিন্তু শিখ ও হিন্দুরাও এই আন্দোলনে যুক্ত হবার পরে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংগঠন করার জন্য দলের নাম বদল করে হল ‘ন্যাশানাল কনফারেন্স’।
নেহেরু কাশ্মীরে গিয়ে শেখ আবদুল্লার সাথে সমঝোতা করেন। তারপর থেকেই ন্যাশানাল কনফারেন্স এর মধ্যে গোলমাল শুরু হয়, বিভাজন হয়। জম্মুর মুসলমান নেতা গোলাম আব্বাস আলাদা ‘মুসলিম কনফারেন্স’ গঠন করেন । তাকে জিন্না সমর্থন দেন। ফলে কাশ্মীরের রাজনীতিতে সরাসরি পাকিস্তান নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ করতে থাকে। স্বাধীন চেতনার সেখ আবদুল্লার সঙ্গে জিন্নার সম্পর্ক খারাপ হয়। সেখ আবদুল্লা বুঝতে পারে পাকি নেতৃত্ব কৌশলে কাশ্মীর কে নিজেদের কুক্ষিগত করতে মরিয়া। এ দিকে গোলাম আব্বাস পাকিস্থান সমর্থনে বিভিন্ন বিক্ষোভ সঙ্ঘটিত করতে থাকে। কাশ্মীর উপতাকার মানুষ কে মিথ্যা গুজবে উত্তেজিত করতে থাকে।
এ রকম পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের শাসন ববস্থা ভেঙ্গে পরে। ডোগরা রাজা
সেইসময় জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী মেহেরচাঁদ মহাজন দিল্লীতে এসে নেহরুর সঙ্গে দেখা করে সৈন্য পাঠিয়ে কাশ্মীরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে অনুরোধ করেন । তারপরে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় ।
ভারত বরাবরই জানিয়ে এসেছে, এটি ভারতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
কাশ্মীরে শান্তির বাতাবরণ নষ্ট করতে পাকিস্তান সরকারের(ISI) মদতে জঙ্গি হামলা চালাই।
No comments:
Post a Comment