আফগানিস্তান, যার সরকারী নাম আফগানিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র। আফগানিস্তানের উত্তর সীমানায় তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান; পূর্বে চীন এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর; দক্ষিণে পাকিস্তান এবং পশ্চিমে ইরান।
রাজনীতির প্রাচীন প্রেক্ষাপট
১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত আফগানিস্তানের রাজা ও তাঁর আত্মীয়েরা কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় নেতারাও শাসনব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার করতেন। ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মত রাজপরিবারের বাইরের একজনকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়া হয় যাতে রাজতন্ত্র আইন প্রণয়নের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পায়।
১৯৬৪ সালের নতুন সংবিধানে দেশটিতে আরও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে রাজা কেবল নির্বাচিত আইনসভার সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে এসময় রাজা রাজনৈতিক দলের বৈধকরণের বিরোধিতা করেন, মূলত জাতিগত ও বামপন্থী দল যাতে গঠিত হতে না পারে, সে কারণে।
১৯৭৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং প্রজাতন্ত্র হিসেবে আফগানিস্তানের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৭৮ সালে আরেকটি অভ্যুত্থানে নিষিদ্ধ বামপন্থী দল পিপল্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ আফগানিস্তান (পিডিপিএ) ক্ষমতায় আসে। এই দলের সাম্যবাদী শাসন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে। তবে ইসলামী বিদ্রোহী মুজাহেদিনেরা এই শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে।
পিডিপিএ-কে সমর্থন করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি পূর্ণ-মাপের আক্রমণ পরিচালনা করে। এই আক্রমণের পরে একজন মধ্যপন্থী পিডিপিএ নেতাকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়, যাতে মুজাহেদিনেরা শান্ত হয়। কিন্তু মুজাহেদিনেরা সোভিয়ত অধিকৃতির বিরুদ্ধে গেরিলা হামলা অব্যাহত রাখে। পিডিপিএ সরকার সোভিয়েত সরকারের কাছ থেকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পেত, অন্যদিকে মুজাহেদিনেরা যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, সৌদী আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে সাহায্য পেত।
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। মুজাহেদিনেরা পিডিপিএ সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করে। অবশেষে ১৯৯২ সালে সরকারের পতন ঘটে, কিন্তু মুজাহেদিনদের ভিতরের দলীয় কোন্দলের কারণে গৃহযুদ্ধ শেষ হয়নি। একদল মুজাহেদিন তালেবান নামের একটি ইসলামী মৌলবাদী আন্দোলন শুরু করে এবং ১৯৯৬ সালে কাবুল দখল করে। তালেবানেরা একটি নৃশংস ও বর্বর শাসনব্যবস্থা চালু করে। ২০০১-এর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহায়তায় উত্তরাঞ্চলীয় জোট তালেবানদের পতন ঘটায়।
তালেবানদের পতনের পর জাতিসংঘ দেশটিতে বহুজাতিগোষ্ঠীয় সরকার স্থাপনে উৎসাহ দেয়। জার্মানির বন শহরে এ নিয়ে সম্মেলনের পর ২০০১-এর ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তার ৬ মাস পরে একটি মধ্যবর্তী সরকার গঠিত হয় যা ২০০৪ সালে একটি নতুন সংবিধান পাশ করে। নতুন সংবিধান অনুযায়ী আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট-ভিত্তিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আফগানিস্তানের প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
আফগান-রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট
বর্তমানে দেশটি তালেবান, আল-কায়দা, মুজাহদিন ও বিভিন্ন ইসলামীক জঙ্গিদের সশস্ত্র আন্দোলনের পিঠস্তান হয়েছে।
২০০৪ সালে আফগানিস্তানের সংবিধান নতুন করে লেখা হয় এবং একটি রাষ্ট্রপতি-ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মাটি কেবলই পপি চাষ, মাদক চোরাচালান ও জঙ্গিদের সশস্ত্র আন্দোলনের পিঠস্তান না, আর ৫টা দেশের মতো আফগানিস্তানের মাটির নিচে আছে আকরিক লোহা, পেট্রোলিয়াম, গ্যাস, তামা, লিথিয়াম, নিউরিয়াম, কোবাল্ট, রৌপ্য, এলুমিনিয়াম, গ্রাফাইট। এবং এই সব খনিজ সম্পদের মধ্যে আকরিক লোহা, গ্যাস, তামা, লিথিয়াম মজুত আছে বিপুল পরিমাণে।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে, উন্নয়নে, অবকাঠামোতে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সশস্ত্র জঙ্গিদের মোকাবিলার জন্য দরকার বিপুল পরিমানের অর্থ , যা হতে পারে বিদেশি বিনিয়োগ এলে। কিন্তু ইতিমধ্যেই মার্কিন সহ বিশ্বের অনেক দেশ-ই আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে অর্থ সাহায করেছে। কিন্তু নিট ফল শূন্য। তালিবান বা আল-কাইদা সহ আনেক জঙ্গিদের কাবু করা যাইনি। সম্প্রতি তালেবান দমনে মার্কিন বাহিনীর আগ্রাসী পদক্ষেপে যুদ্ধ পরিস্থিতির নাটকীয় কোনো উন্নতি ঘটেনি।
আর এই অর্থ আসতে পারে যদি খনিজ সম্পদের খনি গুলো-তে বিদেশি বিনিয়োগ আসে। আর সম্প্রতি ভারত সফরে এসে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর মধ্যে প্রথমে এককভাবে, পরে প্রতিনিধি স্তরে আলোচনায় ঠিক হয় দুদেশের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা আরো গভীর করা। আফগানিস্তানের বৃহত্তম আঞ্চলিক দাতা দেশ ভারত। ২০০১ সালে তালেবান উচ্ছেদের পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পুনর্গঠনে ভারত ১৩০ কোটির ডলারের বেশি আর্থিক সাহায্য দিয়েছে । তৈরি করেছে হাইওয়ে, সংসদ ভবন, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সুসম্পর্ক বিরাজ করছে। কাবুল ও নয়াদিল্লি তাদের সম্পর্ক আরো গভীর করার জন্য এরই মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সই হয় চারটি চুক্তি। কয়লাসহ খনিজ সম্পদ আহরণ, ছোট ব্যবসায়িক প্রকল্প, যুব বিষয়ক এবং সার। বিভিন্ন পরিকাঠামো নির্মাণে কাজ করছে চার হাজারেরও বেশি ভারতীয় কর্মী ও প্রযুক্তিবিদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সম্প্রতি বামিয়ান প্রদেশের হাজিজাক খনিজ সম্পদ খননের বরাত পেয়েছে ভারত।
আফগানিস্তান থেকে ধাপে ধাপে যৌথসেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্ত ভিতে দাঁড় করাতে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অর্থনৈতিক সহযোগিতা মজবুত করতে কারজাই যে বদ্ধপরিকর, সেই বার্তাই দিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই।
আলোচনা শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ড. সিং সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও শক্তিশালী আফগানিস্তান গড়ে তোলার প্রতি ভারতের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, গত বছর স্বাক্ষরিত দুদেশের কৌশলগত সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। আলোচনা হয় আফগানিস্তানের আশপাশ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে।
ভারত বিশ্বাস করে, আন্তর্জাতিক সমর্থন অব্যাহত থাকলে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সন্ত্রাসী হামলাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে আফগানিস্তান।অর্থনৈতিক সহযোগিতার অঙ্গ হিসেবে আফগানিস্তানে ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে কৃষি ও ছোট ব্যবসা, মাইনিং ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ওপর জোর দেয়া হয়, যা হবে উভয় দেশের জনগণের উন্নতির সোপান।
উত্তরে আফগান প্রেসিডেন্ট কারজাই আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে ভারত যেভাবে নিরন্তর সাহায্য দিয়ে এসেছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি ভারতে এসেছি ভারতীয় বাণিজ্য মহলকে বোঝাতে, যাতে তাঁরা যেন আফগানিস্তানে আরো বেশি বিনিয়োগ করেন। আফগানিস্তানে বিনিয়োগ পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো৷ তাই বন্ধু দেশ বিশেষ করে ভারতের বিনিয়োগে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভারত এখন পর্যন্ত ২০০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য দিয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত আকরিক লোহা, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস। চুক্তি সই হলে আকরিক লোহা আহরণে ভারত এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট কারজাই বলেন, পাকিস্তানের ভূখণ্ড দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা দিতে আফগান-পাকিস্তান বৈঠকে ভারতকে সামিল করা দরকার এবং সেই সম্ভাবনা এখন অনেক উজ্জ্বল।
মুম্বাইয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলাপের সময় প্রেসিডেন্ট কারজাই বলেন, ভারতের পুঁজিকে আফগানিস্তানে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হবে।
#> India our front-line partner :---> Karzai
#> Afghanistan's relations with India not at the cost of Pakistan: Hamid Karzai
-------------------------------------------------------------------------------------
#
ভারত আসেন আফগান জলসম্পদ ও এনার্জিমন্ত্রী আলহজ ইসমাইল। আফগানিস্তানের জল সংরক্ষণ তথা জল পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ভারতের সাহায্য চান৷ বলেন, ‘‘৩০ বছর ধরে চলা যুদ্ধে আফগানিস্তানের জলসম্পদ চরম সঙ্কটের মুখে। সেচের জল কমে যাওয়ায় চাষাবাদ তেমন হচ্ছেনা। দেখা দিচ্ছে খাদ্য সঙ্কট৷ দেশের তিন কোটি লোকের মাত্র ৩০ শতাংশ পায় নিরাপদ পানীয় জল। ছোট ছোট বাঁধ ও জলাধার নির্মাণে ভারতের সাহায্য তাই দরকার,'' বলেন আফগান জলসম্পদ মন্ত্রী।
স্বাভাবিকভাবেই ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব পছন্দ করছে না পাকিস্তান। ন্যাটো বাহিনী যদি আফগানিস্তান ছাড়ে, সেক্ষেত্রে যে নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে তার মোকাবিলা করতে ভারতের কৌশলগত নীতি হবে ত্রিমুখী।
এক, আফগানিস্তানের আর্থিক উন্নয়ন ও পুনর্গঠনে ভারতের সাহায্য অব্যাহত রাখা।
দুই, কারজাই সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া।
তিন, তালেবান তথা ইসলামি কট্টরপন্থীদের পুনরুত্থান প্রতিরোধ করা।
এটা স্বাভাবিক যে, আফগান জঙ্গিরাও চাইবে খনি এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। বলার প্রয়োজন রাখে না সে জন্য তারা হিংসার পথও বেছে নিতে পারে। প্রতিবেশি পাকিস্তান ও চিন অন্যদিকে রাশিয়া স্বাভাবিক হিসাবেই আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার কয়েক মিত্র দেশ কোটি কোটি ডলার খরচ করছে আফগান যুদ্ধে। তারাও নীরব থাকবে তেমনটি আশা করা বোকামি। অর্থাৎ আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ দেশটির জন্য আশীর্বাদ হয়েও যেন ঝুঁকিতে রয়েছে। আর সব থেকে বড় কথা ভৌগলিক কারনে আফগানিস্তানকে আয়ত্তে রাখতে পারলে তেল আমদানি তে কোন দিন ব্যাঘাত হবে না ভারতের।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ফের আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই দিল্লি আসছেন ২২ মে,২০১৩।/ এই সফর গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে পাকিস্তানে সরকার বদল এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রেক্ষিতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে কারজাই-মনমোহন সিং বৈঠকের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর সঙ্গে বৈঠকে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই সেদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং তালেবানের সঙ্গে চলতি শান্তি প্রক্রিয়া কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। অবহিত করবেন আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ব্রাসেলসে পাকিস্তানের সেনা প্রধান কায়ানি ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির মধ্যে বৈঠক এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জারদারির বৈঠকের ফলাফলও।
শুধু সামরিক প্রশিক্ষণ নয়। ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র এবং ‘অন্যান্য’ সাহায্যও প্রয়োজন কাবুলের। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে এই দাবি জানাতেই তিন দিনের সফরে ভারতে আসছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত শাহিদা আব্দালি এ খবর দিয়ে জানান, দু’দেশের মধ্যে চলতি নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা সমঝোতা আরও জোরদার করা নিয়ে আলোচনা হবে কারজাইয়ের আসন্ন সফরে।
এখন ২০১৩ এর মাঝামাঝি হয়েই গেল। কাবুল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় আসন্ন। এই অবস্থায় ভারতের সাহায্যের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আব্দালি বলেন, “ভারত গত কয়েক বছর ধরে আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখন যে সময়, তাতে শুধু মাত্র একটি অ্যাকাডেমি গড়া বা প্রশিক্ষণ দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়। আফগান সেনা এবং পুলিশের হাতে সরঞ্জাম চাই। সে জন্য আমরা ভারতের মুখাপেক্ষী।” নিরাপত্তার স্বার্থেই আফগানিস্তানের সামরিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করাটা নয়াদিল্লির কাছে জরুরি। তাই দিল্লি সামরিক সাহায্য বাড়াক, চাইছে কাবুল।
পাকিস্তানে সদ্য পালাবদল ঘটেছে। তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নেওয়ার আগে নওয়াজ শরিফ সরাসরি আইএসআই এবং পাক সেনার অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে জানিয়েছেন, তিনি চান ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য হোক। এ জন্য পাকিস্তানের জমি ব্যবহার করতে দিতেও রাজি তিনি। নওয়াজের বক্তব্যকে এখনই গুরুত্ব দিতে চাইছে না নয়াদিল্লি বা কাবুল। আফগান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য, “যদি তা হয়, তা হলে খুবই ভাল। কিন্তু ভবিষ্যৎই এ ব্যাপারে শেষ কথা বলবে।”
আমি এটাই বলবো যে আফগানিস্তানে যে কোন পদক্ষেপ-ই ঝুঁকিপূর্ণ আর ভারত সেই ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু মনে শঙ্কা হয় কারন আমার কাছে আফগানিস্তান মানে একটা গোলক-ধাঁধা। ইতিহাস বলছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন (এক কথাই রাশিয়ার পরাজয়) আর এক বিশ্ব শক্তি আমেরিকা-র পরাজয়, ভারত পারবে তো নিজেকে এই গোলক-ধাঁধা-র বাইরে রাখতে। আবার এটাও ঠিক যে এরকম সাহসী পদক্ষেপ না নিলে তো ভারত 'বিশ্ব নিরাপত্তা পরিষদে' স্থায়ী আসন পাবে না। কারন ভারতকে তো দক্ষিণ এশিয়ার সর্বময় কর্তা হতে হবে, এক কথায় দক্ষিণ এশিয়ার অভিভাবক। তবেই তো আগামী দিনে ভারত হবে বিশ্বের এক নং শক্তি।
রাজনীতির প্রাচীন প্রেক্ষাপট
১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত আফগানিস্তানের রাজা ও তাঁর আত্মীয়েরা কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় নেতারাও শাসনব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার করতেন। ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মত রাজপরিবারের বাইরের একজনকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়া হয় যাতে রাজতন্ত্র আইন প্রণয়নের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পায়।
১৯৬৪ সালের নতুন সংবিধানে দেশটিতে আরও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে রাজা কেবল নির্বাচিত আইনসভার সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে এসময় রাজা রাজনৈতিক দলের বৈধকরণের বিরোধিতা করেন, মূলত জাতিগত ও বামপন্থী দল যাতে গঠিত হতে না পারে, সে কারণে।
১৯৭৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং প্রজাতন্ত্র হিসেবে আফগানিস্তানের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৭৮ সালে আরেকটি অভ্যুত্থানে নিষিদ্ধ বামপন্থী দল পিপল্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ আফগানিস্তান (পিডিপিএ) ক্ষমতায় আসে। এই দলের সাম্যবাদী শাসন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে। তবে ইসলামী বিদ্রোহী মুজাহেদিনেরা এই শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে।
পিডিপিএ-কে সমর্থন করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি পূর্ণ-মাপের আক্রমণ পরিচালনা করে। এই আক্রমণের পরে একজন মধ্যপন্থী পিডিপিএ নেতাকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়, যাতে মুজাহেদিনেরা শান্ত হয়। কিন্তু মুজাহেদিনেরা সোভিয়ত অধিকৃতির বিরুদ্ধে গেরিলা হামলা অব্যাহত রাখে। পিডিপিএ সরকার সোভিয়েত সরকারের কাছ থেকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পেত, অন্যদিকে মুজাহেদিনেরা যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, সৌদী আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে সাহায্য পেত।
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। মুজাহেদিনেরা পিডিপিএ সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করে। অবশেষে ১৯৯২ সালে সরকারের পতন ঘটে, কিন্তু মুজাহেদিনদের ভিতরের দলীয় কোন্দলের কারণে গৃহযুদ্ধ শেষ হয়নি। একদল মুজাহেদিন তালেবান নামের একটি ইসলামী মৌলবাদী আন্দোলন শুরু করে এবং ১৯৯৬ সালে কাবুল দখল করে। তালেবানেরা একটি নৃশংস ও বর্বর শাসনব্যবস্থা চালু করে। ২০০১-এর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহায়তায় উত্তরাঞ্চলীয় জোট তালেবানদের পতন ঘটায়।
তালেবানদের পতনের পর জাতিসংঘ দেশটিতে বহুজাতিগোষ্ঠীয় সরকার স্থাপনে উৎসাহ দেয়। জার্মানির বন শহরে এ নিয়ে সম্মেলনের পর ২০০১-এর ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তার ৬ মাস পরে একটি মধ্যবর্তী সরকার গঠিত হয় যা ২০০৪ সালে একটি নতুন সংবিধান পাশ করে। নতুন সংবিধান অনুযায়ী আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট-ভিত্তিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আফগানিস্তানের প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
আফগান-রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট
বর্তমানে দেশটি তালেবান, আল-কায়দা, মুজাহদিন ও বিভিন্ন ইসলামীক জঙ্গিদের সশস্ত্র আন্দোলনের পিঠস্তান হয়েছে।
২০০৪ সালে আফগানিস্তানের সংবিধান নতুন করে লেখা হয় এবং একটি রাষ্ট্রপতি-ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মাটি কেবলই পপি চাষ, মাদক চোরাচালান ও জঙ্গিদের সশস্ত্র আন্দোলনের পিঠস্তান না, আর ৫টা দেশের মতো আফগানিস্তানের মাটির নিচে আছে আকরিক লোহা, পেট্রোলিয়াম, গ্যাস, তামা, লিথিয়াম, নিউরিয়াম, কোবাল্ট, রৌপ্য, এলুমিনিয়াম, গ্রাফাইট। এবং এই সব খনিজ সম্পদের মধ্যে আকরিক লোহা, গ্যাস, তামা, লিথিয়াম মজুত আছে বিপুল পরিমাণে।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে, উন্নয়নে, অবকাঠামোতে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সশস্ত্র জঙ্গিদের মোকাবিলার জন্য দরকার বিপুল পরিমানের অর্থ , যা হতে পারে বিদেশি বিনিয়োগ এলে। কিন্তু ইতিমধ্যেই মার্কিন সহ বিশ্বের অনেক দেশ-ই আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে অর্থ সাহায করেছে। কিন্তু নিট ফল শূন্য। তালিবান বা আল-কাইদা সহ আনেক জঙ্গিদের কাবু করা যাইনি। সম্প্রতি তালেবান দমনে মার্কিন বাহিনীর আগ্রাসী পদক্ষেপে যুদ্ধ পরিস্থিতির নাটকীয় কোনো উন্নতি ঘটেনি।
আর এই অর্থ আসতে পারে যদি খনিজ সম্পদের খনি গুলো-তে বিদেশি বিনিয়োগ আসে। আর সম্প্রতি ভারত সফরে এসে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর মধ্যে প্রথমে এককভাবে, পরে প্রতিনিধি স্তরে আলোচনায় ঠিক হয় দুদেশের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা আরো গভীর করা। আফগানিস্তানের বৃহত্তম আঞ্চলিক দাতা দেশ ভারত। ২০০১ সালে তালেবান উচ্ছেদের পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পুনর্গঠনে ভারত ১৩০ কোটির ডলারের বেশি আর্থিক সাহায্য দিয়েছে । তৈরি করেছে হাইওয়ে, সংসদ ভবন, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সুসম্পর্ক বিরাজ করছে। কাবুল ও নয়াদিল্লি তাদের সম্পর্ক আরো গভীর করার জন্য এরই মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সই হয় চারটি চুক্তি। কয়লাসহ খনিজ সম্পদ আহরণ, ছোট ব্যবসায়িক প্রকল্প, যুব বিষয়ক এবং সার। বিভিন্ন পরিকাঠামো নির্মাণে কাজ করছে চার হাজারেরও বেশি ভারতীয় কর্মী ও প্রযুক্তিবিদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সম্প্রতি বামিয়ান প্রদেশের হাজিজাক খনিজ সম্পদ খননের বরাত পেয়েছে ভারত।
আফগানিস্তান থেকে ধাপে ধাপে যৌথসেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্ত ভিতে দাঁড় করাতে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অর্থনৈতিক সহযোগিতা মজবুত করতে কারজাই যে বদ্ধপরিকর, সেই বার্তাই দিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই।
আলোচনা শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ড. সিং সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও শক্তিশালী আফগানিস্তান গড়ে তোলার প্রতি ভারতের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, গত বছর স্বাক্ষরিত দুদেশের কৌশলগত সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। আলোচনা হয় আফগানিস্তানের আশপাশ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে।
উত্তরে আফগান প্রেসিডেন্ট কারজাই আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে ভারত যেভাবে নিরন্তর সাহায্য দিয়ে এসেছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি ভারতে এসেছি ভারতীয় বাণিজ্য মহলকে বোঝাতে, যাতে তাঁরা যেন আফগানিস্তানে আরো বেশি বিনিয়োগ করেন। আফগানিস্তানে বিনিয়োগ পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো৷ তাই বন্ধু দেশ বিশেষ করে ভারতের বিনিয়োগে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভারত এখন পর্যন্ত ২০০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য দিয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত আকরিক লোহা, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস। চুক্তি সই হলে আকরিক লোহা আহরণে ভারত এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট কারজাই বলেন, পাকিস্তানের ভূখণ্ড দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা দিতে আফগান-পাকিস্তান বৈঠকে ভারতকে সামিল করা দরকার এবং সেই সম্ভাবনা এখন অনেক উজ্জ্বল।
#> India our front-line partner :---> Karzai
#> Afghanistan's relations with India not at the cost of Pakistan: Hamid Karzai
-------------------------------------------------------------------------------------
#
ভারত আসেন আফগান জলসম্পদ ও এনার্জিমন্ত্রী আলহজ ইসমাইল। আফগানিস্তানের জল সংরক্ষণ তথা জল পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ভারতের সাহায্য চান৷ বলেন, ‘‘৩০ বছর ধরে চলা যুদ্ধে আফগানিস্তানের জলসম্পদ চরম সঙ্কটের মুখে। সেচের জল কমে যাওয়ায় চাষাবাদ তেমন হচ্ছেনা। দেখা দিচ্ছে খাদ্য সঙ্কট৷ দেশের তিন কোটি লোকের মাত্র ৩০ শতাংশ পায় নিরাপদ পানীয় জল। ছোট ছোট বাঁধ ও জলাধার নির্মাণে ভারতের সাহায্য তাই দরকার,'' বলেন আফগান জলসম্পদ মন্ত্রী।
স্বাভাবিকভাবেই ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব পছন্দ করছে না পাকিস্তান। ন্যাটো বাহিনী যদি আফগানিস্তান ছাড়ে, সেক্ষেত্রে যে নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে তার মোকাবিলা করতে ভারতের কৌশলগত নীতি হবে ত্রিমুখী।
এক, আফগানিস্তানের আর্থিক উন্নয়ন ও পুনর্গঠনে ভারতের সাহায্য অব্যাহত রাখা।
দুই, কারজাই সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া।
তিন, তালেবান তথা ইসলামি কট্টরপন্থীদের পুনরুত্থান প্রতিরোধ করা।
এটা স্বাভাবিক যে, আফগান জঙ্গিরাও চাইবে খনি এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। বলার প্রয়োজন রাখে না সে জন্য তারা হিংসার পথও বেছে নিতে পারে। প্রতিবেশি পাকিস্তান ও চিন অন্যদিকে রাশিয়া স্বাভাবিক হিসাবেই আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার কয়েক মিত্র দেশ কোটি কোটি ডলার খরচ করছে আফগান যুদ্ধে। তারাও নীরব থাকবে তেমনটি আশা করা বোকামি। অর্থাৎ আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ দেশটির জন্য আশীর্বাদ হয়েও যেন ঝুঁকিতে রয়েছে। আর সব থেকে বড় কথা ভৌগলিক কারনে আফগানিস্তানকে আয়ত্তে রাখতে পারলে তেল আমদানি তে কোন দিন ব্যাঘাত হবে না ভারতের।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ফের আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই দিল্লি আসছেন ২২ মে,২০১৩।/ এই সফর গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে পাকিস্তানে সরকার বদল এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রেক্ষিতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে কারজাই-মনমোহন সিং বৈঠকের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর সঙ্গে বৈঠকে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই সেদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং তালেবানের সঙ্গে চলতি শান্তি প্রক্রিয়া কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। অবহিত করবেন আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ব্রাসেলসে পাকিস্তানের সেনা প্রধান কায়ানি ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির মধ্যে বৈঠক এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জারদারির বৈঠকের ফলাফলও।
শুধু সামরিক প্রশিক্ষণ নয়। ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র এবং ‘অন্যান্য’ সাহায্যও প্রয়োজন কাবুলের। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে এই দাবি জানাতেই তিন দিনের সফরে ভারতে আসছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত শাহিদা আব্দালি এ খবর দিয়ে জানান, দু’দেশের মধ্যে চলতি নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা সমঝোতা আরও জোরদার করা নিয়ে আলোচনা হবে কারজাইয়ের আসন্ন সফরে।
এখন ২০১৩ এর মাঝামাঝি হয়েই গেল। কাবুল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় আসন্ন। এই অবস্থায় ভারতের সাহায্যের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আব্দালি বলেন, “ভারত গত কয়েক বছর ধরে আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখন যে সময়, তাতে শুধু মাত্র একটি অ্যাকাডেমি গড়া বা প্রশিক্ষণ দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়। আফগান সেনা এবং পুলিশের হাতে সরঞ্জাম চাই। সে জন্য আমরা ভারতের মুখাপেক্ষী।” নিরাপত্তার স্বার্থেই আফগানিস্তানের সামরিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করাটা নয়াদিল্লির কাছে জরুরি। তাই দিল্লি সামরিক সাহায্য বাড়াক, চাইছে কাবুল।
পাকিস্তানে সদ্য পালাবদল ঘটেছে। তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নেওয়ার আগে নওয়াজ শরিফ সরাসরি আইএসআই এবং পাক সেনার অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে জানিয়েছেন, তিনি চান ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য হোক। এ জন্য পাকিস্তানের জমি ব্যবহার করতে দিতেও রাজি তিনি। নওয়াজের বক্তব্যকে এখনই গুরুত্ব দিতে চাইছে না নয়াদিল্লি বা কাবুল। আফগান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য, “যদি তা হয়, তা হলে খুবই ভাল। কিন্তু ভবিষ্যৎই এ ব্যাপারে শেষ কথা বলবে।”
আমি এটাই বলবো যে আফগানিস্তানে যে কোন পদক্ষেপ-ই ঝুঁকিপূর্ণ আর ভারত সেই ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু মনে শঙ্কা হয় কারন আমার কাছে আফগানিস্তান মানে একটা গোলক-ধাঁধা। ইতিহাস বলছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন (এক কথাই রাশিয়ার পরাজয়) আর এক বিশ্ব শক্তি আমেরিকা-র পরাজয়, ভারত পারবে তো নিজেকে এই গোলক-ধাঁধা-র বাইরে রাখতে। আবার এটাও ঠিক যে এরকম সাহসী পদক্ষেপ না নিলে তো ভারত 'বিশ্ব নিরাপত্তা পরিষদে' স্থায়ী আসন পাবে না। কারন ভারতকে তো দক্ষিণ এশিয়ার সর্বময় কর্তা হতে হবে, এক কথায় দক্ষিণ এশিয়ার অভিভাবক। তবেই তো আগামী দিনে ভারত হবে বিশ্বের এক নং শক্তি।
No comments:
Post a Comment