নির্ধারিত সময়ের বেশ কয়েক দিন আগেই ঢুকে পড়েছিল বর্ষা। আর সেই আগাম বর্ষাই বিপর্যয় ডেকে আনল উত্তরাখণ্ড-হিমাচলের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বৃষ্টি, হড়পা বান আর ধসের ধাক্কায় সেখানে আটকে পড়েছেন কয়েক হাজার তীর্থযাত্রী। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে চার ধাম যাত্রা। আটকে পড়া তীর্থযাত্রীদের উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। বহু লোক নিখোঁজ। সরকারের তরফে প্রথমে ৫০ জন নিখোঁজ বলা হলেও উদ্ধারের কাজ যত এগোচ্ছে, সংখ্যাটা তত বাড়ছে। এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা প্রশাসনের। বহু জায়গাতেই ধস নেমেছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, অতিবৃষ্টির জেরে গঙ্গা-যমুনা এবং তাদের শাখা ও উপনদীগুলিতে হড়পা বান হয়েছে। অসিগঙ্গার জলে একটি চারতলা বাড়ি ও মন্দির ভেঙে পড়েছে। অলকানন্দার জলে গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের একটি অতিথিশালা ভেঙে পড়েছে। কেদারনাথের কাছে অন্তত ১০০টি ছোট-বড় বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হড়পা বানের তোড়ে গোবিন্দঘাটের গুরুদ্বারের সামনে রাখা কয়েকটি গাড়ি ভেসে গিয়েছে।
প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, তড়িঘড়ি বর্ষা এসে যাওয়ায় নদীর জলবহন ক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ মেলেনি।কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী যে দিকেই তাকানো হচ্ছে, শুধু ধ্বংসের ছবি। রবিবার রাত থেকেই উদ্ধারকাজ শুরু করেছে ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি). এ দিন আইটিবিপি-র মুখপাত্র দীপক পাণ্ডে জানান, ভারী বৃষ্টির কারণে ভেঙে গিয়েছে কেদারনাথ, বদ্রীনাথ এবং গৌরীকুণ্ডের রাস্তা। ধস নেমেছে আরও কয়েকটি জায়গায়। সব থেকে খারাপ অবস্থা রুদ্রপ্রয়াগ জেলার। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির খবর মিলেছে উত্তরকাশী থেকেও। হরিদ্বার, হৃষিকেশ, দেরাদুনের বিস্তৃত এলাকা জলের তলায়।
সরকারি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় ৫৫০ জনের মৃত্যুর সংবাদ মিলেছে। ভেঙে পড়েছে হাজার হাজার বেশি বাড়িঘর। মৃত্যুর খবর মিলেছে চামোলি, তেহরি, উত্তরকাশী ও দেরাদুনেও। আইটিবিপি-র মুখপাত্র জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ের একাধিক জায়গায় কয়েক হাজার মানুষ আটকে রয়েছেন। যাঁদের অধিকাংশই তীর্থযাত্রী। তীর্থযাত্রায় গিয়ে আটকে পড়েছেন ক্রিকেটার হরভজন সিংহ-ও। বৃষ্টি ও ধসের কারণে উত্তরাখণ্ডের বুদ্ধি-র কাছে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রীদেরও আটকে দেওয়া হয়েছে।
21/jun/13 শুক্রবার আরও ১৩টি চপার পাঠিয়েছে বায়ুসেনা। সব মিলিয়ে কেদার-সহ বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডে আপাতত কাজ করছে প্রায় ৪৩টি চপার। ধারাসু ও গৌচরে দুটি হেলিপ্যাড চালু করেছে বায়ুসেনা। আইটিবিপি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর আগেই হাত মিলিয়েছিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে। শুক্রবার রেল আবার নতুন টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে। উত্তরাখণ্ডে আটকে পড়া যাত্রীদের ফেরাতে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
উত্তরাখণ্ড প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপর্যয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে প্রায় ৬০টি গ্রাম৷ বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ৷ সেনাবাহিনীর সঙ্গে উদ্ধারকাজে আইটিবিপি, বিএসএফ, বিপর্যয় মোকাবিলা দল৷ তবে এখনও পর্যন্ত সমস্ত দুর্গত এলাকায় পৌঁছতে পারেনি উদ্ধারকারী দল৷ গুপ্তকাশী, কুন্ড এবং অগস্ত মুনিতে পৌঁছয়নি ত্রাণ৷ উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা জানিয়েছেন, আটকে পড়া যাত্রীদের কাছে খাবার, পানীয় জল এবং ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে৷ উত্তরাখণ্ডে ত্রাণ ও পুনর্বাসন বাবদ ১ হাজার কোটি টাকা সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ৷
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা ৫৫০ ছাড়িয়েছে। এখনও ৫০ হাজার মানুষ আটকে। আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যাটা আরও বহুগুণ। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৪,০০০ জনকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।
ত্রাণকার্যে সাহায্যের জন্য শুক্রবার কংগ্রেসের সব সাংসদ ও বিধায়ককে নিজেদের এক মাসের বেতন দিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। একই সঙ্গে সাংসদদের প্রত্যেককে তাঁদের নিজেদের তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে জমা দিতে বলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এসেছে আমেরিকা থেকেও। বিভিন্ন রাজ্যের তরফেও ত্রাণ পাঠানোর প্রতিশ্রুতি এসেছে। সব মিলিয়ে প্রকৃতির রোষে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়া উত্তরাখণ্ডের জনজীবনকে স্বমহিমায় ফেরাতে যথেষ্ট তৎপরতা দেখাচ্ছে কেন্দ্র ও উত্তরাখণ্ড সরকার। সমালোচকদের প্রশ্ন, প্রকৃতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ঠেকানোর ক্ষেত্রে এই তৎপরতা কোথায় ছিল? উত্তরাখণ্ডে যেমন নদীতে ঢালাও বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়া চলছে, তেমনই অবাধে চলছে গাছ-কাটা।
No comments:
Post a Comment