Thursday, 27 June 2013

এশীয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সুরঙ্গ

     কাশ্মীরে যে কোনও মরসুমে দেশের এক প্রান্ত থেকে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখাটা দেশের সরকারের কাছে বেশ চ্যলেঙ্গের। আর ভারতের রেল যোগাযোগ যদি ভূস্বর্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাকি দেশের থেকে তা হলে তো মাথা ব্যথাটা আরও বেশি থাকে। কিন্তু প্রকৃতির কাছে তো মানুষ নিরুপায়। প্রতি বছর শীতেই বানিহালে জওহর সুড়ঙ্গপথ বন্ধ হয়ে যায়।

 ক’দিনের জন্য ভূস্বর্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাকি দেশ থেকে। কাজিগুন্দ থেকে বানিহাল পর্যন্ত নতুন রেল লাইন সেই বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার দিনগুলি এ বার মুছে ফেলবে কাশ্মীর উপত্যকার ক্যালেন্ডার থেকে। এই নতুন রেল-সংযোগ। এমন আশা নিয়েই কাশ্মীর সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ কাজিগুন্দ-বানিহাল ১৭ কিলোমিটার রেল লাইনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এবং বার্তা দিলেন পাক মদতে অশান্ত উপদ্রুত কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে এনে সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এবং এটা তারই এক নমুনা মাত্র।




     রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাকে পাশে বসিয়ে রাজ্যে জোট সরকারের কাজের প্রশংসা করে রেল লাইন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। কাশ্মীরবাসীর সামনে উন্নয়নের স্বপ্ন তুলে ধরেন সনিয়া গান্ধী। কাশ্মীর উপত্যাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য রাজ্যের মুখ্যমুন্ত্রী ওমর আবদুল্লার পিঠ চাপড়ান প্রধানমন্ত্রী।

    আজ বানিহাল থেকে কাজিগুন্দের মধ্যে লাইনের উদ্বোধন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জম্মু থেকে কাশ্মীরে প্রবেশের দ্বিতীয় রাস্তা খুলে গেল। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, জাতীয় প্রকল্পটির অর্ধেক কাজ সারা। নতুন এই রেলপথ সুগম করবে জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন ও আর্থিক স্বাবলম্বনের পথ। রেলের চাকা শুধু ভূগোলের দূরত্ব নয়, ঘোচাবে মানসিক ব্যবধানও।

   বানিহাল স্টেশন থেকে ট্রেনকে সবুজ সঙ্কেত দেখানোর কথা ছিল মনমোহন-সনিয়ার। কিন্তু ঝান্ডা দেখিয়ে যাত্রা শুরু করিয়েই দায়িত্ব সারেননি তাঁরা। সবাইকে অবাক করে দু’জনেই চেপে বসেন ট্রেনে। বানিহাল বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সঙ্গে গল্প করতে করতে বানিহাল থেকে পৌঁছে যান কাজিগুন্দ। সেই ট্রেনেই ফিরে আসেন দু’জনে। আম কাশ্মীরির সঙ্গে তাঁদের এ ভাবে মিশে যেতে কি দেখা গিয়েছে আগে! ফলে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আন্তরিকতা ও ঘনিষ্ঠতার ছবি ফুটে উঠেছে এই উদ্বোধন কে কেন্দ্র করে।

এই মেলবন্ধন, বাকি দেশের সঙ্গে ভূস্বর্গের ঘনিষ্ঠতার স্বপ্নটা দেখেছিলেন কাশ্মীরের মহারাজা প্রতাপ সিংহ। ১৮৯৮ সালে। একশো বছরের বেশি সময় পরে ইউপিএ সরকারের আমলে ২০০৫ সালে প্রথম জম্মু-উধমপুরের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু করে। এর পর ধীরে ধীরে বারামুলা থেকে অনন্তনাগ ও ২০০৯-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন অনন্তনাগ থেকে কাজিগুন্দ পর্যন্ত পৌঁছে যায় রেলের চাকা।

     আজ কাজিগুন্দ থেকে বানিহাল অংশের উদ্বোধন করার পর রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, উধমপুর থেকে কাটরা অংশের কাজ শেষ হয়ে যাবে আগামী অগস্টে। বাকি থাকবে মাত্র ১৩৫ কিমি লাইনের কাজ। যদিও গোটা প্রকল্পের মধ্যে সব থেকে কঠিন অংশ সেটাই। যা শেষ করতে পাঁচ-ছয় বছর লাগবে বলে জানালেন কাজিগুন্দ থেকে ধরম অংশের দায়িত্বে থাকা ইরকনের অধিকর্তা দেবপ্রিয় চৌধুরী। বানিহালে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রী আজ রেল কর্তাদের নির্দেশ দিয়ে যান, কাজ শেষ করতে হবে দ্রুত। সেই প্রসঙ্গে দেবপ্রিয়বাবুর বক্তব্য, “এখন তিনটে সুড়ঙ্গে দিনে ১০ মিটার করে কাজ এগোচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ২০ মিটার করে কাজ হবে।”

     আজ যে লাইনের উদ্বোধন হল, পিরপাঞ্জাল সুড়ঙ্গ তার অন্যতম আকর্ষণ। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ভারতের সব থেকে দীর্ঘ ১১.২১৫ কিমি লম্বা এই সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে জহওরলাল টানেলের প্রায় পাঁচশো মিটার নীচ দিয়ে। দেবপ্রিয়বাবুর দাবি, “এই রেল-সুড়ঙ্গ সারা বছর খোলা থাকবে। এর ফলে কাশ্মীরে প্রবেশের বিকল্প রাস্তা খুলে গেল।”

রেল লাইন উদ্বোধনের অনুষ্ঠান থেকে আজ আরও এক বার বার্তা গেল প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চিনের উদ্দেশেও। তা হল, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বিচ্ছিন্নতাকামী, জঙ্গি তথা কট্টরপন্থীদের প্রতি সনিয়ার বার্তা, “আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে। হিংসার মাধ্যমে নয়।” গত আড়াই দশক ধরে কাশ্মীরে অশান্তি জিইয়ে রাখার মূল কারিগর পাকিস্তান। চিনও যে ভাবে সীমান্ত বরাবর পরিকাঠমো গড়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, ভূস্বর্গে এই রেলপথ তারই ভারতীয় জবাব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরামর্শে রেল মন্ত্রক যথাসম্ভব দ্রুত কাশ্মীরের বুক চিরে ওই লাইন পাতার কাজ চালাচ্ছে। এই কাজ শেষ হলে সীমান্তে সেনা-রসদ পৌঁছে দেওয়া যাবে অনেক সহজে। পিরপাঞ্জাল সুড়ঙ্গ দিয়ে শুধু ট্রেনই নয়, পাশে তিন মিটার চওড়া সড়ক দিয়ে প্রয়োজনে সেনার ট্যাঙ্কও অনায়াসে চলে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রক।



কিছু প্রাসঙ্গিক লিঙ্ক(যেখান থেকে সাহায্য নিয়েছি)

No comments:

Post a Comment