Sunday, 1 September 2013

আমার চোখে বাংলাদেশ

   বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম সম্পর্কে আমার আগের পোস্টটাতে আলোচনা করেছিলাম। এবার আসি এখনকার স্বাধীন বাংলাদেশের কথায়।

     কলকাতা বন্দরকে পলি জমা থেকে রক্ষা করার জন্য ১৯৭৬ এ ফারক্কা বাঁধ তৈরি করে ভারত। অনেক তর্ক-বিতর্কের পরে ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'গঙ্গার জল বন্টন চুক্তি' সই করেন। বিভিন্ন সময় দুই দেশের মধ্যে এই জল বণ্টন নিয়ে মতবিরোধও হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে ভারতের একটা চুক্তির কথা বললাম।

তো গত এক থেকে দেড় বছর ধরে আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্লগে, ফেসবুক পেজে দেখেছি ভারত বিদ্বেষী বিভিন্ন আজগুবি তথ্য ছড়ানো হয়। জানি না তারা এই সব তথ্য গুলো বানায় কি ভাবে! তবে এটা সত্যি যে তারা যদি তাদের এই বেড়েনটাকে (ব্রেন) বাংলাদেশের কোনও ভালো কাজে লাগাত তা হলে বোধহয় অন্য কিছু ফলাফল হতো! তবে হ্যাঁ এই সব আজগুবি পোস্টগুলো কে আমি আমার কিছু বাংলাদেশের ফ্রেন্ডদের দেখায়, সে সব দেখে উত্তর দেবার আগে শুধু হেঁসেছিল তারা। আর বলেছিল যে এই গুলো দেখে পুরো বাংলাদেশ সম্পর্কে খারাপ ভাবার কিছু নেই। কারন একদল আছে যাদের কাজই এই রকম। তাদেরকে আমরা ছাগু বলি। তাদের কে বলি রাজাকারের বাচ্চা। বন্ধুগুলো আরও বলল যে, ওই যারা এই সব মিথ্যা কুসশ্ছা ছড়ায় তারা এখনো বাংলাদেশ কে নিজেদের দেশ বলে মনেই করেনা! তারা এখনো পাকিস্তানকে নিজেদের দেশ মনে করে! মানে তাদের এখনো পাকিস্তানের প্রতি মোহ কাটেনি। তাই এরা কি বলল না বলল সেটা বাংলাদেশের সাধারন মানুষই গুরুত্ব দেয়না, তাতে তুমি এত গুরুত্ব দিচ্ছ কেন? গুরুত্ব যদি দিতেই চাও তা হলে সহবাগ আন্দোলনের কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটাকে দাও। দেখবে সব কিছুর আগে এবং পরে যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করা আছে। আর এই ছাগুরা তো শুধু ফটোশপ করে চালায়!

   বিভিন্ন ব্লগে ভারতকে নিয়ে যে যে বিষয় গুলো নিয়ে কথা হয় সেই প্রসঙ্গে কিছু কথা বলি, 

এটা ঠিক যে প্রতিশ্রুতি দিয়েও আমাদের ঘরোয়া ঐকমত্যের অভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে এখনও স্থল-সীমান্ত ও তিস্তা চুক্তি করে উঠতে পারিনি। কিন্তু,
*স্থল-সীমান্ত চুক্তি টা কেন আটকে আছে?
ভারতে বাংলাদেশের ছিটমহল রয়েছে ৫১টি, যার এলাকা প্রায় ৭ হাজার একর। আর বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, যার জমির পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার একর। ফলে সোজা হিসাবে এই ছিটমহল হস্তান্তর হলে ভারত পাবে ৭ হাজার একর, কিন্তু দিতে হবে ১৭ হাজার একর। মানে ক্ষতি হবে দশ হাজার একর। এত ক্ষতি করে এই চুক্তির কোনও অর্থ হয় না। এমনটা জানতে পেরে ভারতের জনতা পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেস সংসদে এই চুক্তির বিরোধিতা করেছে। মানে সংসদে সংবিধানের সংশোধন বিল পাস হতে দেইনি।
যদি বলেন এটা পাস করানোর উপায় কি? 
বাংলাদেশ যদি বাকি ১০ হাজার একর জমি ভারত সংলগ্ন কোনও জায়গায় দেয় তা হলে এই চুক্তি অতি সহজেই সম্পন্ন হতে পারে। আর ভারত-বাংলাদেশ একে-অপরের মিত্রদেশ হওয়ায়, একে অপরকে সাহায্যের জন্য এই জমি যদি বাংলাদেশ ভারতের চিকেন'স নেক বড়াবড় (শিলিগুড়ি করিডোর) দেয় তা হলে ভারতের খুবই ভালো হয়। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশ কি করবে সেটা বাংলাদেশই জানে। 

    বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে। তার মধ্যে শুধু একটিতে অর্থাৎ গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে ১৯৯৬ সালে। দুই দেশের ৫০টিরও বেশি অভিন্ন নদীর মধ্যে তিস্তার জল বণ্টন চুক্তি অন্যতম। রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ অনুযায়ী, ভারতের মতো উজানের দেশ এতটা জল নিতে পারবে না, যাতে ভাটির দেশ বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, বাস্তুতন্ত্র ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিস্তার জল বণ্টন চুক্তি হল না কেন বা চুক্তি করতে সমস্যা কোথায় ?
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের চাহিদা ১৬ হাজার কিউসেক জল। বাংলাদেশের চাহিদা ৮ থেকে ১০ হাজার কিউসেক। এর থেকে বেশি জল কেউ নিতেই পারবে না। সমস্যা হল, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাস নদীতে ভাল জল থাকছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভাল বৃষ্টি হচ্ছে। সে সময়ে জলের কোনও টানাটানি নেই। কিন্তু নভেম্বর-ডিসেম্বরে বৃষ্টির জল মিলছে না। মরসুম শেষে জানুয়ারি মাসে গিয়ে নদীতে থাকছে সাকুল্যে ৬ হাজার কিউসেক জল। এখানেই সমস্যা। আবার প্রতি বছর বর্ষাতে তিস্তার দুই কুলভেঙ্গে বন্যা হয় উত্তরবঙ্গে। তাই দরকার জলাধার বানানোর। জলাধার ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশও থাকতে হবে। যেখানে বর্ষার অতিরিক্ত জল ধরে রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অঙ্গরাজ্যের অধিকারের প্রশ্নে তুলে সরব তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তাঁর আপত্তির ফলেই রাজ্যসভায় পেশ হয়নি ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি এই চুক্তি বাস্তবায়িত হবে বাংলাদেশের সাথে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠক মাঝে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে বলেন, আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও তিস্তার জল বণ্টন যে ভাবে হওয়া উচিত, সেই ভাবেই কিন্তু হচ্ছে। গজলডোবা ও ডালিয়া, এই দু’জায়গাতেই চুক্তির পরিমাণ অনুযায়ীই জল ছাড়ছে ভারত। চুক্তি না হলেও অনেক ক্ষেত্রে জল বেশিই পেয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তিতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর জল বণ্টনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে। কাজেই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে তিস্তা চুক্তি করা না গেলেও জল ভাগাভাগি নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব ভারত দেখায়নি।

আর হ্যাঁ আর একটা ইস্যুতে সরব হতে দেখেছি, সেটা হল 'টিপাইমুখ বাঁধ' তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে।
 বন্ধুরা আমি নিজে টিপাইমুখ বাঁধ তৈরির বিরুদ্ধে। এতে যেমন বাংলাদেশের ক্ষতি হবে, বোধহয় তার থেকে বেশি ক্ষতি হবে ভারতের, শুধু মাত্র বাঁধটা তৈরি করতে। বিস্তারিত পাবেন আমার আগের পোস্টটাতে 

টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধে আসুন সবাই আমরা একসাথে জনমত গড়ি 

এই প্রকল্পটা বাস্তবায়িত করতে গেলে ৮২ লক্ষ গাছ কাটতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই অনুমুতি চাওয়া হয়, কিন্তু সম্প্রতি ভারতের পরিবেশ মন্ত্রক ও বন দপ্তর এই প্রকল্পের জন্য ছাড়পত্র দেয়নি। ফলে এখন এই প্রকল্প বিশবাঁও জলে। ফলে এটা নিয়ে মনে হয় না আর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু আছে।
-----------------------------------------------------------------------
এবার আসি অন্যান্য সাহায্যের কথায়। সাহায্যের প্রশ্নে দিল্লি বরাবরই ঢাকার পাশেই থেকেছে। সে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ গঠন থেকে শুরু করে সব ব্যাপারেই। যখনই অসুবিধা হয় তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সেটা বাংলাদেশের পরিকাঠামো প্রকল্প থেকে শুরু করে শক্তি, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই। এক কথাই ঢালাও সহায়তার পথে হাঁটছে সাউথ ব্লক(ভারত)।
শেখ হাসিনার ভারত সফরে কম সুদে ৬৪০০ কোটি টাকার ঋণ ঘোষণা করেছিল নয়াদিল্লি। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, এই ঋণে ১.৭৫% সুদ নেওয়া হবে। পরে তা কমিয়ে ১% করা হয়েছে। আমাদের বিদেশ মন্ত্রকের একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ঋণ কোন প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে তার প্রায় পুরোটাই চিহ্নিত করা হয়েছে। যে ১৬টি প্রকল্প ওই টাকায় শুরু হয়েছে তার কয়েকটি শেষও হয়ে গিয়েছে। এই টাকায় বাংলাদেশ ৪২৮টি উন্নত বাস কিনেছে, কেনা হয়েছে ব্রড গেজ লাইনের চলার উপযোগী ১৬৫টি তেলবাহী ওয়াগন এবং মিটার গেজে চলার মতো ৬টি ব্রেক ভ্যান। তৈরি হয়েছে ভৈরব এবং তিতাস সেতু। ঋণের ১৬০০ কোটি টাকা অনুদান হিসাবে ঘোষণা করেছে ভারত।
     নয়াদিল্লি মনে করে, গত তিন বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত যে ভাবে ঢাকার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। সিগারেট ও অ্যালকোহল ছাড়া সমস্ত বাংলাদেশি পণ্যের জন্য ভারত যে ভাবে নিজেদের বাজার খুলে দিয়েছে, তার সুফল সে দেশ পাচ্ছে। সুফল বলতে অর্থনৈতিক সুফল কে বলছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ ভোটারের বয়স ২৫-এর আশেপাশে। তাঁরা অর্থনৈতিক সুযোগ চান, জীবন গড়তে চান। কোনও গোঁড়া ধর্মীয় বিদ্বেষের দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা সমাজ বা রাষ্ট্রকে দেখে না। সরকারে যে দলই থাকুক, ভারত যুবশক্তির জন্য সদর্থক বার্তা দিতে আগ্রহী।
আর তাই দয়াকরে পাকিস্তানের সাথে আমাদের ভারতকে এক টেবিলে বসিয়ে তুলনা করবেন না।

যেখানে আপনারা বিএসএফের দিকে গুলি চালানোর অভিযোগ এনে বারবার আঙুল তোলেন, এক বারও কি ভেবে দেখেছেন কেন তাঁরা গুলি চালায়? বাংলাদেশীদের বোঝা উচিৎ তাঁরা কোনও সন্ত্রাসবাদী নয়, তাঁরা কোনও জঙ্গি নয় যে মানুষকে মারতে পারলে তাদের কোনও লাভ আছে! তাঁরা তো শুধু মাত্র দেশের জন্য সব কিছুর মায়াকে ত্যাগ করে চাকরি করতে আসে। এমন চাকরি যেখানে তাঁরা নিজেরা জানে না যে পরের বার স্বশরীরে বাড়ি ফেরত আসব কি না! যেখানে নিজেদের প্রাণ নিয়ে টানাটানি, সেখানে তাঁদের থেকেও কি কেও বেশি জানে একটা জীবনের মূল্য!
তাঁরা তো শুধু ডিউটি করে, দেশকে বাঁচানোর ডিউটি। ধরুন আপনি রাত ১২ টার সময়, ডিউটি করছেন, কাঁটাতারের বেড়া কেটে কেও ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে, বা কেও আগে অনুপ্রবেশ করেছিল, এখন আবার ভারত থেকে বাংলাদেশ ফিরে যাচ্ছে, আপনি বলুন তো সেই মুহূর্তে আপনি কি করবেন ? আপনি অন্ধকারের মধ্যে ডিউটি করছেন সীমান্তে। প্রথমে তাকে সতর্ক করবেন, তার পর শক্তি দিয়ে পেশ আসবেন। আপনি সতর্ক করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার দিকে চোরাচালনকারিরা, মাফিয়ারা ঝাঁকে ঝাঁকে বুলেট ছুড়ছে! আপনাকেও তো তখন বুলেটের জবাব বুলেটেয় দিতে হবে। আর তা ছাড়া সীমান্তে কোনও সুস্থ, স্বাভাবিক মস্তিসের মানুষ দিনের যে কোনও সময়ই নিশ্চয় কাঁটা তারের বেড়া পাড় হতে যাবেনা। আর বাস্তব তো এটাই যে বর্ডারে গরুর পায়কের, ভারতে জালনোট পাচার কারি, অবৈধ ড্রাগের ব্যবসায়ী, অবৈধ অস্ত্র চালান কারি, ভারত বিরোধী বিভিন্ন জঙ্গি নেটওয়ার্কের লোকই বিএসএফের গুলি তে মারা যায়। আর বাংলাদেশী চোরাচালানকারিরা ভারত থেকে কাশির ওষুধ, ড্রেনড্রাইড নিয়ে যায় ওপার বাংলার অগণিত ছেলে কে নেশার মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে। এই রকম দালালদের উপরই বিএসএফ গুলি চালায়। এই রকম গুলি চালানোয় যদি কেও বিএসএফ কে খারাপ বলে,তা হলে বিএসএফ খারাপ। বিএসএফ যদি ভারতে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকে বাঞ্চাল করেদেয়, তা হলে তো এক শ্রেণির বাংলাদেশীর কাছে তো বিরাগের কারন হবেই, এটা আবার নতুন কি! তোমাদের আসার ইচ্ছা হয় বৈধ পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে ভারত আসো, পড়াশোনার ইচ্ছা হলে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসো, কাজ করার ইচ্ছা হলে ওয়ার্কিং পারমিট নিয়ে ভারতে বৈধ ভাবে কাজ করো। কিন্তু তোমরা তা করো না। লুকিয়ে চোরায় পথে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে ভারতে ঢুকে যাও, তার পর সারাজীবনের জন্য ভারতের ঘাড়ে চেপেবসো। পয়লা বৈশাখ এবং ২১শে ফেব্রুয়ারী, বিজয়ার দিন দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন কে কেন্দ্র করে দুই বাংলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় মিলনোৎসব হয়। এর সুযোগ নিয়ে প্রচুর বাংলাদেশী ভারতে ঢুকেপড়ে। এই বিষয়ে ভিডিও দেখেছিলাম। আপনারা সেটা দেখতে এই পোস্টটা দেখতে পারেন, 

এই ৫০০০০ অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ধরে বেঁধে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে কে ? অনুপ্রবেশ  পশ্চিমবঙ্গে


আর সত্যি কারের 
উত্তেজনা তো ছড়ায় বাংলাদেশের কিছু স্বার্থান্বেষী শক্তি যারা ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার সমাধান চায় না, তারাই তো প্রতি পদে পদে বাগড়া দিচ্ছে যে কোনও পদক্ষেপে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আটকাতে হোক কিমবা বাংলাদেশি সংখ্যালঘু হিন্দু ভাই, বোনেদের কে শান্তিতে বাস করতে না দিতে তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে!
সম্প্রতি যখন গোটা বাংলাদেশ পাকিস্তানের সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এক হয়ে উঠেছে, তখন তারা সেটাকে অন্য দিকে চালনা করতে হিন্দু ভাই, বোনেদের বাড়ি, মন্দিরকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ধ্বংস লীলা চালায়। সঙ্গে সম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি করে। যেসব আদর্শের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল তার একটি হল ধর্মনিরপেক্ষতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে ধর্মনিরপেক্ষতা,অসাম্প্রদায়িকতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ও শোষনমুক্ত সমাজকেই বোঝায়। কাজেই এইগুলাকে না মানা মানে বাংলাদেশের জন্মকে অস্বীকার করা। ধর্মনিরপেক্ষতার মানে হল রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক নিজ নিজ ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। এইখানে কোন কিন্তু নাই। একজন মুসলমান তার নামাজ, রোযা, হজ্ব, জাকাত পালন করার পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে এবং এটা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিবে। একজন হিন্দু তার পূজা-অর্চনাপালন করার পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে এবং রাষ্ট্র তাকে প্রয়োজনীয়সহায়তা দিবে। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্র তার প্রতিটিনাগরিক যাতে ‘নির্বিঘ্নে’ নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে সেটাও নিশ্চিত করবে। কোন কারণে কোন নাগরিকের ধর্মীয় কাজে বিঘ্ন ঘটলে রাষ্ট্র তাকে সেই বিঘ্নদূর করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। আর এসবই বাংলাদেশের সংবিধানের ১২ এবং ৪১ অনুচ্ছেদে আছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। কাজেই অন্যের ধর্মকে হেয় করার কোন সুযোগ নাই। আপনি ব্যক্তিগতভাবে নাস্তিক হতে পারেন, সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু অন্যের নাগরিক অধিকারকে হেয় করার অধিকার রাষ্ট্র আপনাকে প্রদান করে না। ঠিক একইভাবে আপনি আস্তিক হতে পারেন, কিন্তু কোন নাস্তিককে ধর্ম পালন না করার জন্য হেয় করারও আপনার কোন অধিকার নাই। এটাই ধর্মনিরপেক্ষতা।সবার ধর্মীয় অধিকার সমান। কিন্তু দিন দিন সংখ্যালঘু বলে হিন্দু দের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে তা মানা যায় না। যারা ধর্মগত ভাবে হেও করছে, তাদের ইতিহাস ক্ষমা করবে না। এই বিষয়ে জানতে আমার আগের একটা পোস্ট দেখতে পারেন 'হে ভগবান, তাঁদের অপরাধ, তাঁরা শুধু তোমার পুজো করে !'

আর সীমান্ত উত্তেজনার কথা বলতে গেল যেটা না বললে শেষ হবে না সেটা হল গত বছর মানে ২০১২ সালের দীপাবলির আলোতে   যখন গোটা দেশ মাতোয়ারা, (১৩ এবং ১৪ নভেম্বর) সেই সময়েই বিনা প্ররোচনায় জলপাইগুড়ি সীমান্তে বেরুবাড়িতে আউটপোস্ট এগিয়ে এনে বেশ কিছুটা ভারতীয় জমি দখল করে নেয় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)।
     ভারতের বেরুবাড়ির খুদিপাড়া এলাকায় ক্যাম্পও বসিয়ে দেয় বিজিবি-র ১৮ নম্বর ব্যাটেলিয়ন। বিএসএফ খবর পেয়ে বড়সড় বাহিনী নিয়ে যাওয়ার পরে তারা ফের পিছিয়ে যায়। কিন্তু তার আগে টানা দু’দিন কার্যত অবরুদ্ধ ও বন্দি অবস্থায় থাকতে হয় দক্ষিণ বেরুবাড়ির কয়েকশো বাসিন্দাকে।
   বাংলাদেশের ভিতরেরই একটি প্রভাবশালী শক্তি তখন উত্তেজনা সৃষ্টি করে সমস্যা জিইয়ে রাখতে মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ। এই উদ্দেশ্যে বিতর্কিত এলাকার জমি দখল থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী ভারতীয় গ্রামগুলিতে হুমকি দিয়ে চাষাবাদ বন্ধ করে দেওয়ার কাজও তারা করে চলেছে। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করে রাজ্য সরকারকে আলাদা আলাদা রিপোর্ট দিয়েছেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক ও ‘ইন্দো-বাংলাদেশ বর্ডার ডিমার্কেশন’-এর যুগ্ম অধিকর্তা। একই মর্মে রিপোর্ট দিয়েছেন নদিয়ার করিমপুরের বিডিও-ও। সব রিপোর্টেই বলা হয়েছে, সীমান্ত সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেললেই একমাত্র এই ধরনের অপচেষ্টা বন্ধ হতে পারে। বেরুবাড়ি এখনও শান্ত হয়নি। নিত্য সেখানে গোলমাল চলছে। তাই পরবর্তী স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে রাজ্যের তরফে বিষয়টি উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০১২, গত ১৩ ডিসেম্বর ‘ইন্দো-বাংলাদেশ বর্ডার ডিমার্কেশন’ (আইবিবিডি)-এর যুগ্ম অধিকর্তা দীপঙ্কর রায়চৌধুরি স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি রিপোর্ট (মেমো নম্বর- বিডিওয়াই/১৩৭৩-৪৩২-টি/২০১২) পাঠিয়ে বেরুবাড়ি সমস্যার সমাধানে ‘উপযুক্ত’ অবস্থান নেওয়ার কথা বলেছেন। বেরুবাড়ির অশান্তি ও সেখানকার বাসিন্দাদের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে ১১ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্রও মহাকরণে পৃথক রিপোর্ট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন। করিমপুরের বিডিও-ও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, নদিয়ায় সীমান্ত সংলগ্ন বাউসমারিতে চাষাবাদে বাধা দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে বিজিবি।
আইবিবিডি-র রিপোর্টটিতে লেখা হয়েছে, ‘২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মেটাতে প্রোটোকল স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ। এই প্রোটোকলই ১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্টের (এলবিএ) সংশোধিত রূপ হিসাবে চূড়ান্ত হবে। সেই হিসাবে বেরুবাড়ি ভারতের ‘অ্যাডভার্স পজেশন’-এ রয়েছে, এবং তা ভারতেই থাকছে। এই অবস্থায় বিজিবি-র ১৮ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাকির হোসেন কালীপুজো এবং দিওয়ালির দিন (১৩ এবং ১৪ নভেম্বর) বেরুবাড়ির খুদিপাড়ায় ক্যাম্প তৈরি করেন। এই ভূখণ্ডটি সীমান্তের মানচিত্রে স্ট্রিপ শিট নম্বর- ৪২৬ হিসাবে চিহ্নিত। যা ভারতের দখলেই রয়েছে বরাবর।’ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘খুদিপাড়ায় ক্যাম্প তৈরি করে বিজিবি-র সদস্যরা দু’দিন ধরে বেরুবাড়ি দখল করে রাখে। ভারতীয়দের সেখান থেকে বাইরে আসতে দেওয়া হয়নি। এমনকী হুমকি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়, কেন তারা ভারতে থাকতে চায়। এখনও বিজিবি-র উস্কানিতে সেখানে ভারতীয়দের চাষবাসে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’ 

বিএসএফের পূর্বাঞ্চলের এডিজি বংশীধর শর্মা এই প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বেরুবাড়ি ভারতের রয়েছে। সেখানে রাস্তা নির্মাণ হচ্ছিল। তা নিয়ে আপত্তি তুলে বিজিবি হঠাৎই এগিয়ে এসে ক্যাম্প তৈরি করে। কাজে বাধা দেয়। খবর পাওয়ার পর সেখানে বাহিনী পাঠিয়ে অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে। এখন অবশ্য স্থিতাবস্থা ফিরেছে।”

 ২০০১-এর এপ্রিলে মেঘালয়ের পিরদিউয়া ‘অ্যাডভার্স পজেশন’-এ মোতায়েন ১৫ জন বিএসএফ জওয়ানকে বাংলাদেশি ভূখণ্ড বরাইবাড়িতে টেনে নিয়ে গিয়ে নৃশংস অত্যাচারের পরে খুন করা হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এর বেশ কিছু সদস্যও এ কাজে ইন্ধন জুগিয়েছিল বলে অভিযোগ। এ ঘটনার পরে দু’দেশের সম্পর্ক সাংঘাতিক খারাপ দিকে মোড় নিয়েছিল। ঘটনাচক্রে আওয়ামি লিগের আগের আমলের শেষ দিকেই এই ঘটনা ঘটেছিল। 

 'যে দুর্গতিনাশীনি তাকেই দুর্গা বলে।' এক এক সময় মনে হয়, বাংলাদেশিরা আসল দুর্গা 'ইন্দিরা গান্ধী' কেই চিনল না !

আমি তো এটাই বলবো, আলোচনার মাধ্যমে সব কিছুরই সমাধান আছে। আর তাই যে বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক চলছে, সে গুলো কে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে মেটানো উচিৎ।

No comments:

Post a Comment