
ভুটানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে 'ড্রুক ফুয়েনসাম সোগপা (ডি পি টি)' জয়ী হয়ে ভারতের চির শত্রু চিনের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াই। স্বাভাবিক ভাবেই, যে দেশ অর্থাৎ ভুটান কোন তৃতীয় রাষ্ট্রের সাথে কী ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলিবে,সে-সংক্রান্ত নীতি দীর্ঘ দিন ধরে নয়াদিল্লির মর্জিনির্ভর ছিল, আর তার জন্যই বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুভিধা ভোগ করত, সেই দেশকে ভারত যদি আরও কিছু স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য ২০০৭ সালে ভারত-ভুটান মৈত্রী চুক্তি সম্পাদিত করে, সেখানে বলা হয়, ভুটান নিজের বিদেশনীতির ক্ষেত্রে সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী। তার মানে বোধহয় এটা না যে ভারত বিরোধী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে ভারত কে কোণঠাসা করার মতো নীতি গ্রহন করুক থিম্পু! আর সেই বন্ধুতের স্বরূপ হিসাবেই কিন্তু এত দিন দিল্লি ভুটানকে অর্থনৈতিক ভাবে বিপুল সাহায্য করে এসেছে। এমন কি ভারতের বাজারে তেল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়লেও ভুটানের গ্রাহকদের উপর যাতে বোঝা না পরে তার জন্য সরাসরি ভর্তুকি দিয়েছে সাউথ ব্লগ। যার জন্য ভুটানের সাধারণ জনগন কোনও দিন বিশ্ব বাজারের অর্থনৈতিক সঙ্কটের আঁচ পাইনি। কিন্তু ভুটানের শাসক দল ডি.পি.টি. ভারতকে বাদ দিয়ে ঘনিষ্ঠতা বাড়াই চিনের সাথে। স্বাভাবিক ভাবেই চিনের সাথে আঞ্চলিক আধিপত্য কায়েম রাখার লড়াইয়ে ভারত কূটনৈতিক প্রয়াসের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে পরে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভুটানের সঙ্গে তিক্ততা তৈরি হয় ভারতের।
ভারত ঠিক করে আস্তে আস্তে ভুটানকে দেওয়া অর্থনৈতিক সাহায্য কমিয়ে, তার বদলে সেই সব অর্থে ভারতের সামরিক শক্তিকে আরও মজবুদ করতে হবে। তত দিনে ভুটান আবার একটা নির্বাচনের সম্মুখীন হয়। মানে ভুটানে দ্বিতীয় নির্বাচন হয়। আর এই নির্বাচনের ঠিক আগে দিল্লি সিধান্ত নেয়, ভুটানকে দেওয়া কেরোসিন এবং রান্নার গ্যাসের উপর ভর্তুকি তুলে নেওয়া হবে। সে দেশের কেরোসিন এবং রান্নার গ্যাস থেকে ভারত ভর্তুকি তুলে নেওয়ায় থিম্পুতে আগুন জ্বলে গিয়েছিল। ভারত-বিরোধী প্রচার চূড়ান্ত আকার নেয়। হয় ধর্মঘটও। ৩০জুন, ২০১৩ সে দেশের দশম যোজনা পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাদের অধীনেই একাদশ যোজনা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু মাঝের সেই পনেরো দিনের জন্য কোনও বাজেটই তৈরি হয়নি রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে সদ্য পা রাখা ভুটানে। আটকে যায় ভারতের দেওয়া ভর্তুকিও।
সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা বিদেশ মন্ত্রকের নর্দান ডিভিশনের একটি গোপন নোট। তাতে বলা হয়েছে, ‘ভুটান ভারতের গুরুত্বকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনছে না। দেওয়া অর্থ তারা কী ভাবে খরচ করছে, তাতেও স্বচ্ছতা নেই।’ তা ছাড়া, ভুটানের সঙ্গে চিনের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতাও অপছন্দ দিল্লির। বিদেশ মন্ত্রক সূত্র অবশ্য তখন বলে যে, ভুটানে নতুন সরকার হলে তার সঙ্গে ভর্তুকির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
ইতিমধ্যেই ভুটানে নতুন সরকার এসেছে। ভুটানের আইনসভার দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনে শাসক দল ড্রুক ফুয়েনসাম সোগপা (ডি পি টি) প্রতিদ্বন্দ্বী দল পি ডি পি-র কাছে পরাস্ত হয়। এই নির্বাচনে ৪৭টির মধ্যে ৩২টি আসন জিতে বিরোধী দল এ বার ক্ষমতায় এসেছে। গত মাসে নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে ভুটানে। কিন্তু তার কয়েক মাস আগে থেকেই বন্ধুভাবাপন্ন এই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেশ খারাপ হয়েছে। নানা বিষয় নিয়ে দু’দেশের মধ্যে ঠোকাঠুকি লেগেই রয়েছে। বিক্ষুব্ধ প্রতিবেশী বলয়ের মাঝে নতুন করে শত্রু বাড়ুক কোনও ভাবেই চায় না ভারত। তিক্ততা সরিয়ে রেখে তাই সম্পর্ক মেরামতে তৎপর হয়েছে নয়াদিল্লি।
ইতিমধ্যেই শীর্ষ স্তরে সেই কাজ শুরু করা হয়েছে। ভুটানের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেরিং তবগে ছ’দিনের সফরে ভারতে এসছেন এখন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ছাড়াও মন্ত্রিসভার বেশ কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছেন তিনি।
দিল্লির বিভিন্ন কর্মসূচি ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক পরিদর্শন ও বাণিজ্য সম্মেলন উপলক্ষে হায়দরাবাদেও যাবেন তবগে।
সম্পর্ক মেরামতের জন্য আগেই প্রধানমন্ত্রী শেরিং তবগের কাছে থিম্পু গিয়েছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন এবং বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ। দু’দেশের কৌশলগত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে ভুটানের নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তাঁরা। উত্তরর্পূাঞ্চলের ঠিক মাথায় চিন-সীমান্ত সংলগ্ন ভুটান অবস্থান ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
এই সফরের মাঝে, ভুটানে তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আরও অনেক ভারতীয় বিনিয়োগের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে। যেটা সম্পর্ক মেরামতির দিক থেকে একটা ইতিবাচক দিক।
শেখ হাসিনা সরকারের কড়া সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের মাটি থেকে আলফার প্রায় সব ঘাঁটি উচ্ছেদ হয়েছে। তার পরে আলফার এক দল নেতা ধরা পড়ে দিল্লির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু পরেশ বরুয়ার নেতৃত্বাধীন এই উগ্রপন্থী দলটির অন্য অংশ নাশকতার পথ ছাড়েনি। এর আগে ২০০৩-২০০৪-এ ভারত ও ভুটানের সেনারা ভুটানের জঙ্গলে যৌথ অভিযান চালিয়ে আলফার সব ঘাঁটি ভেঙে দেয়। সম্প্রতি ভুটানের জঙ্গলে আলফা ফের কিছু তৎপরতা শুরু করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর এসেছে। উত্তরবঙ্গ ও উত্তরপূর্বাঞ্চলের কিছু জঙ্গি সংগঠনকেও প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে ফের চাঙ্গা করে তোলার কৌশল নিয়েছে আলফা। উত্তরবঙ্গে ফের সক্রিয় কেএলও। ভুটানে আলফা বা কেএলও-র মতো জঙ্গিরা যাতে না ঘাঁটি গাড়তে পারে, সে জন্যও ওই দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ভারতের পক্ষে জরুরি।
ভারত-ভুটানের মধ্যেকার টানাপড়েনের সমাপ্তি চাই।
লিঙ্ক -1) ভূটান wiki
No comments:
Post a Comment